বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান নেতানিয়াহুর

অনলাইন ডেস্ক: আট মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের অবসানে ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, এখন এ যুদ্ধ বন্ধের সময় এসেছে। যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েল তিন ধাপের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি হবে এবং জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলের সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে।

সেখানে মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দু’পক্ষের মধ্যে বন্দি ও জিম্মি বিনিময় হবে। এ চুক্তি শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি শত্রুতা বন্ধ এবং গাজায় বড় ধরনের পুনর্গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে।

- Advertisement -

হামাস বলছে, তারা এ প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ নয়।

গতকাল শনিবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্থানীয় সময় শুক্রবার বলেন, প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে একটি ‘পরিপূর্ণ ও সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি’; সেই সঙ্গে জনবহুল এলাকা থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হবে। ফিলিস্তিনি বন্দিদের জিম্মি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বাইডেন বলেন, এটা আসলেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। হামাস সব সময় বলে, তারা যুদ্ধবিরতি চায়। তাহলে তারা এ চুক্তি মানে কিনা, সেই বক্তব্য প্রমাণের এটি একটি সুযোগ। এ যুদ্ধবিরতি গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়াসহ বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোতে আরও মানবিক সহযোগিতা পৌঁছানোর সুযোগ করে দেবে।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে সেনাসহ সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা হবে। এ যুদ্ধবিরতি তখন স্থায়ীভাবে শত্রুতার অবসান ঘটাবে। এ প্রস্তাবে রাজি হতে হামাসকে যারা আহ্বান জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও। তিনি তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে বলেন, ‘এ চুক্তি অবশ্যই মেনে নিতে হবে, যাতে আমরা লড়াই বন্ধ দেখতে পারি।’ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও এক্সে এ চুক্তির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, সারাবিশ্ব গাজায় অনেক দুর্ভোগ এবং ধ্বংস প্রত্যক্ষ করছে। এখন এ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়।

কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে যুদ্ধ বন্ধে রাজি নন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে এখন নতুন করে যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এ প্রস্তাবনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ চুক্তির তৃতীয় দফায় থাকবে– মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনা। পাশাপাশি বাড়িঘর, স্কুল ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণের জন্য মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে পুনর্গঠন পরিকল্পনা। বাইডেন তাঁর বক্তব্যে স্বীকার করেছেন, হয়তো কিছু ইসরায়েলি এবং ইসরায়েল সরকারের কর্মকর্তা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘যতই চাপ আসুক, আমি ইসরায়েলের নেতৃত্বকে এ চুক্তির পক্ষে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ইসরায়েলি নাগরিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা এই মুহূর্তটিকে হারাতে পারি না।

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, নতুন এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে জো বাইডেনের সঙ্গে সাড়া দিতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ। এক্সে লাপিদ বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানকে উপেক্ষা করতে পারে না ইসরায়েল সরকার। একটি চুক্তি রাখা আছে টেবিলে এবং সেটা বাস্তবায়ন হওয়া চাই।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৩৭৯ জনে পৌঁছেছে। আহত ৮২ হাজার ৪০৭ জন। গতকাল আরও ৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৫০ জন। ধারণা করা হয়, আরও হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।

এই বিভাগের আরও সংবাদ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিতো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না