জনসমর্থন নেই বলেই বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বিএনপি, সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

এফএনএস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির তো খুঁটির জোর নেই। যদি সেটা থাকতো তাহলে তো তারা বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে যেতো না, ধরনা দিয়ে বেড়াতো না। তিনি বলেন, জনগণ বিএনপিকে সবক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কোন মুখ নিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, পেট্রলবোমা মারা, নাশকতা করে মানুষ খুন করেছে। এখন মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবে কোন মুখ নিয়ে। পারছে না বলেই বিদেশিদের পিছে পিছে ঘুরছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশ নেবে না বলে আসছে- এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকার কী ভাবছে? এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেকোনো রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। তবে চাইবো- সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অনেক হুমকি দিচ্ছে। এটাই তো তাদের কাজ। যত উন্নয়নই হোক, বিরোধিতা করাটাই তাদের কাজ। তবুও তারা যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে অনেক কিছুই হতে পারতো। আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি আমাকে না চায়, তাহলে আমি থাকবো না। দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। আমি অবশ্যই চাই আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসুক। নেতৃত্ব কাউন্সিলররা ঠিক করেন। কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তটাই চূড়ান্ত। তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় পরিণত হয়েছি। এখন বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত। র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, র‌্যাবকে আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, তারা তো তেমনই কাজ করছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস না থাকায় আমেরিকা নাখোশ কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বিকেল ৪টার দিকে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সকল সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন আরও সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করবে। তিনি বলেন, সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল বলে আমি মনে করি। শেখ হাসিনা জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে প্রতিবারের মত এবারও বাংলায় বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও জ¦ালানি সঙ্কট ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এ সকল সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশ^ সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান সঙ্কট নিরসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি ও উন্নয়ন ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরে অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কার্যক্রমের প্রসারের জন্য তিনি বিশ^নেতৃন্দকে আহ্বান জানান এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে সকলের ন্যায্য ও সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করার উপরও গুরুত্বারোপ করেন। বিশ^শান্তি অর্জনের লক্ষ্যে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার হতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে আসছে। মানবিক কারণে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্টীকে বাংলাদেশ সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন চলাকালে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রপতি, ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি, কসোভোর রাষ্ট্রপতি, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর, ইউএন হ্যাবিট্যাট-এর নির্বাহী পরিচালক, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক, জাতিসংঘের হাই রিপ্রেজেনটেটিভ, গ্লোবাল এফেয়ার্স মেটা’র প্রেসিডেন্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং জাতিসংঘের মহাসচিব। এ সকল দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আমি পারস্পরিক ও বৈশি^ক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সফরের সময় ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজনে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি এবং ভয়েস অব আমেরিকা তাঁর সাক্ষাৎকার নেয় বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে যান এবং ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন। ওয়াশিংটন ডিসি-তে অবস্থানকালে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম এনার্জি-এনভায়রনমেন্ট নিউজ, সিবিএস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য পলিটিকো তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এসব সাক্ষাৎকারে জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সঙ্কট, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে বৈশি^ক সঙ্কট এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়সমূহ উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফর সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেন, ব্রিটেনের প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশে তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা হন। তিনি এবং ছোটবোন শেখ রেহানা ১৮ সেপ্টেম্বর বাকিংহাম প্যালেসে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে যুক্তরাজ্যের রাজার এক সংবর্ধনায় যোগ দেন। ওয়েস্ট মিনস্টার প্যালেসের হলে শবাধারে সংরক্ষিত প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে রাখা শোক বইতে প্রধানমন্ত্রী বাংলায় লিখেন, ‘আমি, বাংলাদেশের জনগণ, আমার পরিবার এবং আমার ছোটবোন শেখ রেহানার পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’ শোক বইয়ে রেহানা লিখেন: ‘তিনি আমাদের হৃদয়ের রানী এবং সব সময় থাকবেন।’ অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবেতে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে প্রধানমন্ত্রী যোগদান করেন। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীগণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোসহ বিশে^র কয়েক শ’ বিশিষ্ট ব্যক্তি শেষকৃত্যে যোগ দেন বলে তিনি জানান। এর আগে, ১৬ সেপ্টেম্বর কনফেডারেশন অফ ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রির (সিবিআই) প্রেসিডেন্ট চেলসির লর্ড করণ বিলিমোরিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে লর্ড বিলিমোরিয়ার প্রয়াত পিতা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল ফরিদুন বিলিমোরিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানাই। লর্ড বিলিমোরিয়া বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় এবং লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ের স্টারমার আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি যুক্তরাজ্য জুড়ে লেবার পাটি থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই দিন মেরিলেবোনের লর্ড স্বরাজ পালও আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া, বিবিসি’র প্রখ্যাত সাংবাদিক ও উপস্থাপক লরা কুয়েন্সবার্গ আমার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌঁছেন এবং ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মোট ৯টি উচ্চ পর্যায়ের সভা ও সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন সামিট – এ ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। ২০-এ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ৭৭তম অধিবেশনের সভাপতি সাবা করোসির আমন্ত্রণে বিশে^র নারী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন এবং সভায় তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারী সমাজের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে নারীর সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারী নেতৃত্বের সুযোগ সৃষ্টি নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করি। এ ছাড়া, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিশ^ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি। প্রধানমন্ত্রী জানান, ২১ সেপ্টেম্বর আমি বাংলাদেশ, বতসোয়ানা, স্লোভাক রিপাবলিক এবং ইউএন হ্যাবিট্যাটের যৌথ আয়োজনে টেকসই আবাসন বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করি। এ সভায় আমি টেকসই আবাসন নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য যেমন গৃহহীন ও ভূমিহীন জনগণের জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্প, গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের জন্য ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ উদ্যোগ, ‘ঘরে ফেরা’ প্রকল্পের কথা তুলে ধরি। তিনি বলেন, একই দিন আমি গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ (জিসিআরজি) এর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করি। এই সভায় জাতিসংঘ মহাসচিব, জার্মানির চ্যান্সেলর, সেনেগালের রাষ্ট্রপতি, বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রী এবং ইন্দোনেশিয়া ও ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ অংশগ্রহণ করেন। বৈশি^ক আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলায় জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক -কে আরও জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সুনিদিষ্ট যেসব রাজস্ব ও আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন করছে সেগুলি অবহিত করি। প্রধানমন্ত্রী জানান, ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে অভ্যর্থনা সভায় আমি অংশগ্রহণ করি। এ সময় আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাই। তিনি জানান, ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই লেভেল সাইড ইভেন্টে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে এই হাই লেভেল সাইড ইভেন্টটি আয়োজন করে। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে তিনি ৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবসমূহ হলো: রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক সমর্থন ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা; আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, জাতীয় আদালত এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান মামলায় সমর্থন প্রদান; জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা; আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐক্যমতে মিয়ানমারের অঙ্গীকারসমূহ এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করা; মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তাকারীদের নির্বিঘ্নে প্রবেশ নিশ্চিত করা। ওই দিন তিনি এবং বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী এন্টি-মাইক্রোবিয়াল রেসিসটেন্স বিষয়ে “ওয়ান হেল্থ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন এএমআর” শীর্ষক গ্রুপের সভায় যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন প্রধানমন্ত্রী ইউএস বাংলা বিজনেস কাউন্সিল-এর আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এ বৈঠকে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, চিকিৎসা শিল্প, সামুদ্রিক শিল্প, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্কসহ বাংলাদেশের শিল্পাঞ্চলগুলিতে বিনিয়োগের জন্য মার্কিন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানান বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।

 

 

এই বিভাগের আরও সংবাদ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিতো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না